একটু ধৈর্য ধরতে হবে, নতুন ভোরের আলো আসবেই। | Mental Health Awareness | Dr. Kedar Ranjan Banerjee
বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা কেউ ভালো নেই। সবাই চিন্তার মধ্যে দিয়ে, আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। কাজের অনিশ্চিতা, জীবনের অনিশ্চিতা আমাদের ভাবাচ্ছে। ক্রমে আমাদের ধৈর্য শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের এই দুর্দিন যদি ধৈর্য হারিয়ে ফেলি বা নতুন করে আশা না খুঁজি তাহলে আমরা জীবন যুদ্ধে হেরে যাবো। আসুন এবিষয়ে একটা গল্প শোনা যাক। গল্পের নাম—'চোর সাধুবাবা'।
• একদিন এক সাধুবাবা এবং তার এক শিষ্য গ্রামের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছিলেন। ক্রমে সন্ধ্যে হয়ে এলো। এরপর তিনি এবং তার সেই শিষ্য একজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। গৃহকর্তা তাদের দেখে প্রণাম করেন এবং তাদের বসিয়ে গরম দুধ খেতে দেন। তারপর সাধুবাবা বললেন যে, আমাদের তো অনেক দূর যেতে হবে। আজ রাতটা যদি তোমার বাড়িতে থাকি তাহলে কি তোমার কোনো অসুবিধা হবে? গৃহকর্তা বললেন, যে না না, কোনো অসুবিধা নেই। এরপর তারা গল্প করতে শুরু করলেন। সাধুবাবা জিজ্ঞাসা করলেন যে, তোমার বাড়িতে আর কে কে আছেন? গৃহকর্তা বললেন, আমার স্ত্রী, এক মেয়ে ও আমার মা। আমাদের খুব সুখের সংসার। সাধুবাবা শুনে খুশি হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের এই সংসারটা চলে কি করে? গৃহকর্তা বললেন, আমার এক গরু আছে, সে যা দুধ দেয় তার থেকে আমরা কিছুটা খাই আর বাকিটা বিক্রি করেই আমাদের ভালো মত চলে যায়। সাধুবাবা বললেন, এই যে সামনে এতো বড়ো ফাঁকা জমি আছে তাতে চাষবাস করো না! তখন গৃহকর্তা বললেন, আমার ওই গরুটি যতটা দুধ দেয় আমাদের খুব ভালো করে তাতে সংসার চলে যায়। সাধুবাবা আর কিছু বললেন না। তারপর সবাই খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়লেন।
• মাঝরাতে সাধুবাবা তার শিষ্যকে ডেকে তুলে বললেন ওই গরুটিকে খুলে দিতে। শিষ্য মনে মনে ভাবলো গুরুজী আমায় দিয়ে চুরি করাচ্ছেন। গরুটিকে খুলে সাধুবাবা আর তার শিষ্য গরুটিকে কিছুটা দূর গিয়ে ছেড়ে দেন। তারপর তারা নিজেদের আশ্রমের দিকে চলে যান। এরপর মাস যায়, বছর যায়, সাধুবাবার ব্যবসা বেড়ে ওঠে। শিষ্য প্রচুর অর্থ লাভ করতে থাকে। তবে শিষ্যটির মনে গরু চুরি করার অপরাধ বোধ থেকেই যায়। তাই সে একদিন ব্যবসার টাকা কিছুটা নিয়ে ওই গৃহকর্তার বাড়িতে যান। গিয়ে দেখেন ওখানে সবকিছু বদলে গেছে। চারিদিকে সোনার ফসল, গোয়ালে চারটে গরু বাধা। ধানের গোলায় ধান ভরে আছে। শিষ্যটি ওই বাড়ির দরজায় গিয়ে টোকা দিলো। গৃহকর্তা এসে খুললেন, তিনি দেখেই শিষ্যকে চিনতে পারেন। সাথে সাথে বললেন, আপনারা যেদিন চলে যান সেদিনই আমার গরুটা চুরি হয়ে গেছে। তারপর কাঠ কেটে কয়েকদিন সংসার চালাই আর ওই কাঠ কাটার টাকা দিয়েই কিছু বীজ কিনি। তারপর আস্তে আস্তে চাষবাস শুরু করি আজ এই জায়গায় দাঁড়িয়েছি।
এই গল্পটা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, জীবনে খারাপ সময় আসবেই। এই যে পরিস্থিতি সেটা আমাদের সবারই গরু চুরির সময়। অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। তবে আমাদেরও মনে রাখতে হবে যে, অন্ধকার কেটেই নতুন ভোরের আলো আসবেই। শুধু একটু ধৈর্য ধরতে হবে।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। এই বিষয়ে আরও বিশদে জানতে আমরাদের Bengal Fusion চ্যানেলটিকে সাবস্ক্রাইব করুন এবং নীচে দেওয়া ভিডিওর লিঙ্কটিতে ক্লিক করুন।