আমাদের কতটা সঠিকভাবে ঘুমানো প্রয়োজন এবং কেন, জানেন কি? | মনোবিদ কি বলছেন | Mental Health Awareness | Dr. Jayita Saha |

একটা সুস্থ জীবন পাওয়ার জন্যে আমাদের যেমন পর্যাপ্ত খাবারের প্রয়োজন হয়, বাসস্থান প্রয়োজন হয় ঠিক তেমনি এর পাশাপাশি দরকার হয় নিয়মিত ঘুমের। হ্যাঁ বন্ধুরা, প্রতিটা মানুষের ঠিক কতটা পরিমান ঘুমের দরকার সেই বিষয়ে আজকে আমরা কথা বলবো। বর্তমানে মানুষ এতো ব্যস্ত যে, পর্যাপ্ত পরিমান খাবার খেলেও পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম তারা ঘুমান না। আজকাল জীবনে প্রতিটা মানুষই এতো ব্যস্ত যে, তারা ঠিক করে ঘুমানোর সময় পান না। তার ওপর এখন ফোনের উপদ্রব। সারাদিনে কাজের মধ্যে সময় না পেয়ে বেশির ভাগ মানুষই ভাবেন রাত্রে ঘুমের সময় থেকে কিছুটা সময় ফোন কাটালে কিছুই হয়না। কিন্তু এটা করে তারা মারাত্বক ক্ষতি করছে নিজেদের।

girl-g6657705b9_1920_1_0.jpg

• প্রতিটা মানুষের সারাদিনে আট ঘন্টা ঘুমানো উচিৎ। এই টানা আট ঘন্টা ঘুমের চারটে স্তর থাকে। প্রথম তিনটে স্তরকে বলা হয় Non Rapid Eye Movement Sleep। এক্ষেত্রে আমাদের চোখের নড়াচড়া প্রায় হয়না। অন্যদিকে চতুর্থ স্তরটি হলো Rapid Eye Movement Sleep। এই সময় চোখের নড়াচড়া খুব বেশি বেড়ে যায়। ঘুমের যখন শেষরদিকে আমরা পৌঁছে যাই তখন এই চতুর্থ স্তরটি শুরু হয় অর্থাৎ আমরা যখন গভীর ঘুমে থাকি। আর ঠিক এই সময় আপনার মস্তিষ্কের কাজ অনেক বেড়ে যায়। বরং বলা ভালো যে, আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে তৈরী করে পরের দিনের জন্যে। অনেকেই আছেন যারা ভাবেন অনেক রাত পর্যন্ত ফোনে কথা বলে তারপর ঘুমাতে যায় আর সকালে তাড়াতাড়ি ওঠে। অন্যদিকে সারাদিনে দুপুরের দিকে একঘন্টা-আধঘন্টা ঘুমিয়ে নেয়। হয়তো আপনারা ভাবছেন যে, এই তো আট ঘন্টা ঘুমিয়েই নিলাম। কিন্তু না এটা ভুল ধারণা। আপনার রাতের আট ঘন্টা ঘুমের বদলে আপনি যদি চারঘন্টা ঘুমান বা সারাদিনে কাজের ফাঁকে ফাঁকে এক ঘন্টা-আধঘন্টা ঘুমান তাহলে ঘুমের যে চারটি স্তর আছে ওটা কিন্তু সম্পূর্ণ হয়না। ফলে আপনি ঘুমালেও আপনার শরীরে ঘুমের ঘাটতি কমছে না আর টানা আট ঘন্টা ঘুমালে আপনার যতটা ভালো লাগা উচিৎ ততটা ভালো লাগছে না। কারণ টানা আট ঘন্টা ঘুমালে আপনার শরীরে যা যা কাজ হয় সেগুলো হয়না। এবার আমরা জানবো যে, কি কি কাজ হয় ঘুমানোর সময়।

woman-gaccb15aa0_1920_0.jpg

• আমরা যখন কিছু পড়ি তখন সেটা আমাদের শর্ট টার্ম মেমোরিতে চলে যায়। সেটা যদি লং টার্ম মেমোরিতে যায় তাহলে সেটা সারা জীবনের মতো মনে থেকে যায়। কিন্তু যদি সেটা শর্ট টার্ম মেমোরিতেই থেকে যায় তাহলে সেটা দশ দিনের বেশি থাকে না। আর এই শর্ট টার্ম মেমোরি থেকে লং টার্ম মেমোরিতে স্মৃতি সঞ্চয় হওয়াকে বলা হয় মেমোরি কনসলিডেশন। এই প্রক্রিয়া চলে যখন আমরা টানা আট ঘন্টা ঘুমাই। তাছাড়া আর কোনো সময় এই প্রক্রিয়া হওয়া সম্ভব নয়। এই জন্যে আপনি পরীক্ষার সময় দিন রাত জেগে পড়লেন কিন্তু ঘুমালেন না। ফলে পরীক্ষা দিতে গিয়ে আর কিছুই মনে পড়ছে না। এটা ছাড়াও আমরা যখন খুব চিন্তিত থাকি তখন আমাদের শরীরে অ্যাড্রিনালিন একটা হরমোন নিঃসৃত হয়। আমরা যখন এই আট ঘন্টা ঘুমাই তখন এই অ্যাড্রিনালিন নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায় ফলে সেই সময় আমাদের কোনো স্ট্রেস থাকে না। তখন আমাদের আবেগ সম্পর্কিত কাজগুলো হতে থাকে। এই জন্যে হঠাৎ আপনার ঘুম ভেঙে গেলে আপনার মন খারাপ করে, ডিপ্রেশন অনুভব হয়। অর্থাৎ সেই সময় আপনার আবেগ সম্পর্কিত কাজগুলো চলছিল আর আপনি হঠাৎ জেগে গেছেন। তাই প্রতিটা মানুষেরই আট ঘন্টা ঘুম দরকার।

desperate-gebb342ff4_1920_0.jpg

সুস্থ স্বাভাবিক জীবন পেতে হলে নিয়মিত ঘুমান। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। 

এই বিষয়ে  আরও বিশদে জানতে আমরাদের Bengal Fusion চ্যানেলটিকে সাবস্ক্রাইব করুন এবং নীচে দেওয়া ভিডিওর লিঙ্কটিতে ক্লিক করুন।

অনুলিখন: 
Oindrila Chakraborty
ll