আমাজনের গনগনে ফুটন্ত নদীর জল খেলে নাকি সেরে যায় সমস্ত রোগ!

আমরা অনেকেই ব্রাজিলের আমাজনের জঙ্গল সম্পর্কে জানি। পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয় এই বিশাল রেইন ফরেস্টকে। সেই সঙ্গে নানা অদ্ভুত গাছপালা, বন্য জীবজন্তু ও প্রাণীর বাসস্থান এই জঙ্গল। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই জানিনা এই আমাজনেই রয়েছে একটি অদ্ভুদ রহস্য। এইখানেই রয়েছে একটি বয়েলিং রিভার অর্থাৎ ফুটন্ত নদী। এই নদীর তাপমাত্রা এতটাই বেশি যে কোন জীবজন্তু যদি কোনভাবে এই নদীর জলে পড়ে যায় তাহলে সে চোখের নিমেষে সেদ্ধ হয়ে যায়।

rain-forest-gaf804baf1_1920_0.jpg
মায়ান্তুয়াকু নামের এক বিশেষ উপজাতি বসবাস করে আমাজনের জঙ্গলে।  তাদের বর্ষিয়ান গুরুরা আমাজনের জঙ্গলের এই রহস্যের কথা দীর্ঘ বছর লুকিয়ে রেখেছে গোটা পৃথিবীর কাছ থেকে। এই ফুটন্ত নদীর জল বিশেষ ঔষধি সম্পন্ন। সাধারনত এই জল বিক্রি করে রোজগার করেন স্থানীয় মানুষজন। এই মায়ান্তুয়াকু শব্দটি এসেছে মায়ান এবং ইয়াকু এই দুই শব্দ থেকে। যার অর্থ হলো এক বিশেষ শক্তি। এই প্রজাতির মানুষেরা বিশ্বাস করেন এই নদীর জলে কোন এক অস্বাভাবিক শক্তি কাজ করে এবং তার কারণেই এই বয়েলিং রিভার সৃষ্টি হয়েছে। তবে এই নদী বহির্বিশ্বের কাছে আসে আন্দ্রে  রুশো নামে এক মেরিন বায়োলজিস্ট-এর হাত ধরে। পেরুর জিওথার্মাল ম্যাপের কাজে তিনি যুক্ত হইয়েছিলেন। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছিল এই ম্যাপ। পেরুর সবথেকে উষ্ণতম স্থান গুলিকে চিহ্নিত করা হচ্ছিল এই ম্যাপে। আর ঠিক সেই সময় তার চোখে পড়ে এই বয়েলিং রিভার। তবে এ ব্যাপারে গবেষণা করতে গিয়ে তাকে কম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় নি। 

body-of-water-g0b6d8e970_1920_0.jpg
স্থানীয় অধিবাসীরা বাণিজ্যিক এবং আঞ্চলিক বিশ্বাসগত কারণে  কোনোভাবেই তাকে নদীর জলের কাছাকাছি যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছিল না। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে অবশেষে বয়েলিং রিভার নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি।উকালদপা শহর থেকে প্রায় 2 ঘন্টা সময় পর অবশেষে পৌঁছন বয়েলিং রিভারের কিনারে। ধীরে ধীরে ঠান্ডা জল গরম হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে জলের উপর দেখা যেতে থাকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। দেখতে পান নদীর ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বড় বড় সাদা পাথর। পাখি থেকে শুরু করে বাঁদর এবং অন্যান্য মরা জীবজন্তুর দেহাবশেষ ভেসে বেড়াচ্ছিল নদীর উপরে। এরপর গবেষণা শুরুর জন্য আন্দ্রে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন। তিনি মেপে দেখেন নদীর জলের তাপমাত্রা প্রায় 200 ডিগ্রী ফারেনহাইট। অনেক সময় নদীর নিকটবর্তী কোন আগ্নেয়গিরির লাভা চুয়ে এসে জলের উষ্ণতা বাড়িয়ে দেয়। এক্ষেত্রে তাই হবে এমনটাই ভেবেছিলেন আন্দ্রে। কিন্তু বয়েলিং রিভারের নিকটবর্তী আগ্নেয়গিরির দূরত্ব ছিল 400 কিলোমিটার। তাহলে নদীর জল এত উষ্ণ কিভাবে। গবেষণায় সেভাবে কোনো উত্তর দিতে পারেননি আন্দ্রে। আসল কোন কারণে নদীর জল এতটা গরম তা প্রমাণ করা যায়নি আজও। অনেকে বলেন  হয়তো  প্রকৃতির আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে নদীর জল উষ্ণ হয়ে উঠেছে। তবে সে দিক থেকে দেখতে গেলে এই নদী কয়েক হাজার বছরের পুরোনো। তাই গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণ একেবারেই এখানে খাটে না। এখনো পর্যন্ত বহু বিজ্ঞানী একাধিকবার এই নদীর জল কে নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন। কিন্তু ঠিক কোন কারণে নদীর জল এতটা উত্তপ্ত তা আবিষ্কার করা যায়নি এখনো পর্যন্ত। 

gocta-gcad9216b2_1920_0.jpg

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। 

 

এই বিষয়ে  আরও বিশদে জানতে আমরাদের Bengal Fusion News Time চ্যানেলটিকে সাবস্ক্রাইব করুন এবং নীচে দেওয়া ভিডিওর লিঙ্কটিতে ক্লিক করুন।

অনুলিখন: 
Oindrila Chakraborty
ll