ডাচ নগরী চুঁচুড়া
ব্যান্ডেল, হুগলী, চুঁচুড়া এই তিনটে শহরকে জুড়ে ১৮৬৫ সালে তৈরি হয়েছিল হুগলী চুঁচুড়া পৌরসভা। পুরো শহরে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে কিন্তু তারপরও যেন একটা ইতিহাসের গন্ধ লেগে রয়েছে শহর জুড়ে।ডাচ সমাধিক্ষেত্রে প্রবেশে কোনরকম বাধানিষেধ নেই। নিরিবিলি পরিবেশ ও গাছের ছত্রছায়ায় এই সমাধিক্ষেত্র। তবে সময়ের বিবর্তনে আশপাশ জুড়ে গড়ে উঠেছে পাকা দালান বাড়ী। Archaeological Survey of India এর তত্বাবধানে রয়েছে এই সমাধিক্ষেত্রটি। ১৮-১৯ শতকে চুঁচুড়ায় বসবাসকারী ডাচরা এই সমাধিটি প্রতিষ্ঠা করেন। সমাধিটি দুটো ভাগে বিভক্ত একদিকে রয়েছে ডাচদের সমাধি আর অন্য দিকে রয়েছে ইংরেজ ও লোকাল মানুষের সমাধিস্থল। এখানে সবচেয়ে পুরোনো সমাধি রয়েছে ১৭৪৩ সালে কর্নেলিস ডে জং এর। এই সমাধিক্ষেত্রে রয়েছে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শেষ গভর্নর ড্যানিয়েল ওভারবিকের সমাধি। যিনি ১৮৪০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়াও রয়েছে রবার্ট মে, ষ্টার থমাস, জন আলবার্ট সিচটেরম্যানসহ বেশ কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিদের সমাধি। তবে ১৯৯৩ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এই সমাধিক্ষেত্রটি ভীষনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইন্দো- ডাচ স্থাপত্যের নিদর্শন পাওয়া যায় বেশ কিছু সৌধে। সমাধিক্ষেত্রের আশপাশ জুড়ে রয়েছে ছোট ছোট রাস্তা।
সুসান্না আন্না মারিয়া পশ্চিম ইউরোপের এক ছোট দেশ নেদারল্যান্ডে জম্মগ্ৰহন করেন। যিনি পরবর্তীকালে ১৭৫৯ সালে এক ডাচ ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে চলে আসেন চুঁচুড়া তথা তৎকালীন ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া উপনিবেশে। তাঁর প্রথম স্বামী পিটার ব্রুইসের সমাধি রয়েছে চুঁচুড়া ডাচ সমাধিক্ষেত্রে। ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে পিটার ব্রুইসের মৃত্যু হয়। আর সে সময় থেকে চুঁচুড়া বৃটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর হাতে চলে যায় । ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কার্যত সলিল সমাধি হয়। ১৭৯৫ সালে ডাচ নারী সুসান্না আন্না মারিয়া দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন এক বৃটিশ ব্যবসায়ীকে। চুঁচুড়া ও চন্দননগরের মাঝে ষাট বিঘা জমির ওপর সুসান্না আন্না মারিয়ার ছিল বিশাল এক বাগান বাড়ি। সুসান্না আন্না মারিয়ার ইচ্ছে মৃত্যুর পর তাকে যেন এই বাড়িতে সমাধিস্থ করা হয়। উনি যখন মারা যান তখন বৃটিশ রাজ চলছে। আর তাঁর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী সুসান্না আন্না মারিয়াকে রাজকীয়ভাবে সমাধিস্থ করা হয় বাগানবাড়ি তথা আয়েশবাগে। কিন্তু সাত বিবির যে গল্প রয়েছে তাতে সুসান্না আন্না মারিয়ার সাতজন স্বামী ছিলেন আর তারা প্রত্যেকেই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। এসব গল্প অনেকটাই কৃত্রিমভাবে তৈরি করা কারন ইতিহাসের পাতায় সুসান্না আন্না মারিয়ার দুটো বিয়ে প্রমানপত্র হিসেবে রয়েছে।