আপনি 'সময়' কে অবহেলা করছেন না তো? সময়ের সাথে তাল মিনিয়ে চলুন নাহলে হারিয়ে যাবেন। | Social Awareness | Bidhan Saha |

আমরা সময়কে কেউ বাঁধতে পারিনি, কেউ সময়কে নিজের মত চালাতে পারিনি, কেবল সময়কে ঘড়িতে মাপতে পেরেছি মাত্র। তাও পেরেছি কিনা সে বিষয় সন্দেহ আছে। পৃথিবীর কোনো বিজ্ঞান এই সময়কে বাঁধতে পারেনি। আপনি ঘুমিয়ে থাকুন বা যাই করুন না কেন! সময় কিন্তু নিজের গতিতেই চলে। আর যে সময়টা চলে যাচ্ছে সেটা আর কোনোদিন ফিরে আসেনা। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, 'Time and tide wait for none.' ফলে যে মুহূর্তটা চলে গেলো তারচেয়ে অনেক রঙ্গিন মুহুর্ত আপনার জীবনে আসবে কিন্তু ওই যে মুহূর্তটা চলে গেলো সেটা আর কোনোদিন ফিরবে না। এর জন্যেই প্রতিটা মুহূর্তই ভীষণ দামী, ফলে আমাদের তাই সময়ের সাথে ছুটতে হয়। আমাদের সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। বন্ধুরা বিজ্ঞান বলছে যে, ডায়ানোসরের সময়েও পিঁপড়ে ছিলো। কিন্তু সেই বিশাল আঁকার ডায়ানোসর অবলুপ্ত হয়ে গেলেও, ক্ষুদ্র পিঁপড়ে কিন্তু আপনার আমার ঘরে আজও হেঁটে বেড়াচ্ছে। ফলে পাল্টে ফেলাই জীবন।

ant-1127650_1920_0.jpg

• সময়ের সাথে কেন তাল মিলিয়ে চলা জরুরি:

'Kodak' কোম্পানিটার নাম নিশ্চই মনে আছে। একটা সময় এই কোম্পানিতে প্রায় দু লক্ষ মানুষ কাজ করতেন। আর সারা পৃথিবীতে যত ছবি তোলা হত তার প্রায় ৮০% ছবি এই কোডাক ক্যামেরাতেই তোলা হত। সেই সব ছবি প্রিন্ট হত কোডাক পেপারেই। কোডাক ক্যামেরার নাম জানেনা বোধ এমন মানুষ কেউ নেই। কিন্তু সেই কোম্পানিটা বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি। এখন আমার আপনার হাতে যে মোবাইল ফোন আছে তার ক্যামেরা দিন দিন আরও উন্নত হচ্ছে। এখন পাসপোর্ট সাইজের ছবি তোলার জন্যে এখন আর কোডাক ক্যামেরা নিয়ে কোনো ফটোল্যাবে যেতে হয়না। বাড়িতে ক্যামেরায় ছবি তুলে বাড়ির প্রিন্টার দিয়ে প্রিন্ট করেই মোটামুটি কাজ চলে যায়। ফলে কোডাক কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। ঠিক একই ভাবে বন্ধ হয়ে গেছে HMT এর মত হাতঘড়ির কোম্পানি, অ্যাম্বাসাডারের মত গাড়ির কোম্পানি। যেসমস্ত কোম্পানির নাম ওপরে বলা হলো, সেগুলো সবই নিজের নিজের দুনিয়ায় ছিলো এক-একটা মাইলস্টোন। কিন্তু এতো সাফল্যের পরেও এই সমস্ত নামি-দামী কোম্পানি গুলো হারিয়ে গেলো আমাদের রোজকার দুনিয়া থেকে।

camera-1130731_1920_0.jpg

আবার ছোটবেলায় আমরা দেখেছি যে, রাস্তার ধারে এসটিডি, আইসড বা পিসিও র লম্বা হলুদ রঙের কাঠের ঘর। যেখানে টাকার বিনিময়ে আপনি আপনার প্রিয় মানুষদের সাথে মনের কথা আড়ালে আবডালে বলতে পারতেন। কিন্তু এখন দেখুন ওই সমস্ত এসটিডি, আইসড, পিসিও গুলো সব বন্ধ হয়ে গেছে কারণ এখন সবার ঘরে ঘরে ফোন চলে এসেছে। আর ওই সমস্ত এসটিডি, পিসিও গুলি হয়ে গেছে জেরোক্সের দোকান বা মোবাইল রিচার্জ করার দোকান। সময়ের সাথে বদলেছে সবটা। আজ থেকে বছর পাঁচেক আগেও দেখেছি যে, রিচার্জ যারা করাতেন তাদের দোকানে লম্বা লাইন এবং দোকানদারের সামনে আলাদা আলাদা কোম্পানির জন্যে আলাদা আলাদা ফোন। কিন্তু সময়ের ফেরে আমরা এখন ঘরে বসেই রিচার্জ করতে পারছি। আস্তে আস্তে রিচার্জের দোকানের ভিড় কমছে। সেগুলো আবার মোবাইল বিক্রি করার বা মোবাইল সারানোর অথবা মোবাইলের আনুষঙ্গিক জিনিসের দোকানে পরিণত হচ্ছে। ফলে একেই বলে পাল্টে ফেলা।

iphone-410324_1920_0.jpg

আমেরিকায় একটি গবেষণায় বলেছেন, আগামী ১০ বছরে ৯০% মানুষ সরাসরি কাজের সাথে যুক্ত থাকবেন না। পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকবেন। আমেরিকায় যে নতুন ডাক্তার বা আইনজীবী হচ্ছেন তারা কেউ কাজ পাচ্ছেন না। কারণ আইবিএম ওয়াটস বলে একটি সফটওয়্যার মানুষকে মানুষের চেয়েও দ্রুত আইনি পরিষেবা দিচ্ছে। ফলে এই সফটওয়্যারের সাথে যে বা যারা পরিচিত হতে পারবেন না তারা তাহলে কাজ পাবেন না বা সময়ের তলে হারিয়ে যাবেন। এই যে উবার (Uber) একটি কোম্পানি, আপনি জানলে অবাক হবেন এই কোম্পানির একটি গাড়িও নেই। এটা একটা সফটওয়্যার কোম্পানি।

people-1979261_1920_0.jpg

• এতো গুলো উদাহরণ দেওয়ার অর্থই হলো, আগামী দিনে সময়ের সাথে বিজ্ঞান ও আধুনিকতার যে প্রভাব তা আমাদের মধ্যে ইতিমধ্যে পড়তে শুরু করে দিয়েছে। এই লকডাউন মধ্যবর্তী সময়ে আমাদের বড়োরা বা বয়স্ক যারা আছেন তারা সবাই কম-বেশি মোবাইল ফোনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শিখেছি। সময়ের সাথে চলার অর্থ এই নয় যে, গড্ডলিকা প্রবাহে নিজেকে ভাসিয়ে দেবেন। যা ভালো, যা নতুন তাকে গ্রহণ করুন। আর সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। 

 

এই আরও বিশদে জানতে আমরাদের Bengal Fusion চ্যানেলটিকে সাবস্ক্রাইব করুন এবং নীচে দেওয়া ভিডিওর লিঙ্কটিতে ক্লিক করুন।

অনুলিখন: 
Oindrila Chakraborty
ll