সংসারের মধ্যে কি কোনো আনন্দ খুঁজে পাছেন না? অনাসক্তি ভুগছেন? এর কারণ ও সমাধান কি? | Social Awareness | Bidhan Saha |
জীবনে বয়স বাড়লে বা না বাড়লে দেখা যায় জীবনে একটা অনাসক্তি আসছে। অনেকেই অভিযোগ করেন যে, আমার স্বামী ভীষণ অনাসক্ত হয়ে গেছে, সংসারে প্রতি কোনো মন নেই। এভাবেই বন্ধু করে বান্ধবীর বিরুদ্ধে, স্বামী করেন স্ত্রীর বিরুদ্ধে আবার প্রেমিক করে প্রেমিকার বিরুদ্ধে। কিন্তু এই অনাসাক্ত বিষয়টা কি! সত্যি কি অনাসাক্ত হয়ে যাওয়া মানে তার জীবন থেকে সব রঙ মুছে যাচ্ছে? জীবনের প্রতি উদাসীনতা! কিন্তু Bengal Fusion অন্যরকম মনে করে।
• দেখুন অনাসক্তি মানে কিন্তু জীবনের প্রতি বা কাজের প্রতি উদাসীনতা নয়। তাহলে অনাসক্তি কি! অনাসক্তি হলো, যখন কোনো ব্যক্তি ভীষণভাবে কাজের প্রতি আগ্রহী কিন্তু যখন সেই কাজের ফলাফল প্রকাশ হচ্ছে তখন সে সেই ফল গ্রহণে খুব বেশি আগ্রহী নয় অর্থাৎ ফলাফলের বিষয় সে উদাসীন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ধরুন একটি দলে যিনি প্রধান থাকেন অর্থাৎ টীম লিডার তিনি সারাক্ষণ দলের জন্যে কাজ করছেন, দলকে উঁচু স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু যখন সেই দল কোনো সম্মান পাচ্ছে তখন তিনি সেই মনে করছেন যে, পুরো সম্মানটাই দলের প্রাপ্য। দল ছাড়া আমি কিছুই নই অর্থাৎ তিনি সেই আনন্দের প্রতি উদাসীন। এবিষয়ে সবচেয়ে বড়ো উদাহরণ হলো, আমাদের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী। তিনি নোবেল পুরস্কার পাওয়ার সময় ভেবেছিলেন যে, যাক বিশ্বভারতীর নর্দমার একটা সুরাহা করা গেলো, অর্থাৎ তিনি কাজের প্রতি এতোটাই আসক্ত যে, তাঁর কাছে ওই পুরস্কারের আনন্দটা ভীষণ খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। এক্ষেত্রে আরও একটি ঘটনা বলা যায়, সুকদেবকে তাঁর পিতা বলেছিলেন যে, যাদের জন্ম তপবনেই এবং সারাজীবন তপবনে কাটিয়ে মারা গেলো, তারা ধর্ম করছে বলে আমি মনে করিনা। যারা সংসারে থেকে সংসারে কামনা-বাসনা, চাওয়া-পাওয়া থেকে বেরিয়ে আসতে পারে তারাই আসল ত্যাগ করে। বন্ধুরা, যারা কোনোদিন কাবাবের স্বাদ পায়নি তারা যদি বলে আমি কাবাব খাইনা বা কাবাব আমার ভালোলাগে না, তারা কোনোদিন কাবাবকে ত্যাগ করেনি। ফলে সংসারের পাকচক্রের মধ্যে থেকে, সংসারের সমস্ত স্বাদ গ্রহণ করে তারপর আপনি যদি বেরিয়ে আসতে পারেন তাহলেই সেটা অনাসক্তি বা ত্যাগ।
• এবিষয়ে একটা গল্প শোনা যাক, একবার এক ভদ্রলোক এক সাধুবাবার কাছে গেছে। সেই সাধুবাবা ধর্ম সাধনার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ব্যবসা করে। ফলে সেই ভদ্রলোকটি গিয়ে সাধুবাবাকে বলেন, সাধুবাবা আমি কয়েকদিন ধরে রাধাকৃষ্ণের যুগল দর্শন পাচ্ছি স্বপ্নে। আমার আর বোধ হয়ে সংসার ধর্ম হবে না, আমার বৈরাগ্য নেওয়ার সময় হয়ে এসেছে। সাধুবাবা বললেন, ওসব কিছু না, তোর পেট গরম হয়েছে এই ওষুধটা নিয়ে খা সব ঠিক হয়ে যাবে। তখন ভদ্রলোকটি বললো যে, না না বাবা আমার সত্যি আর সংসারের প্রতি মন নেই। তখন সাধুবাবা বললেন কেন? তোর একটি সুন্দরী বৌ আছে, হীরের টুকরো ছেলে আছে, দুটো মেয়ে আছে। এমন ভরা সংসার ফেলে বৈরাগ্য নিবি কেন? তখন সেই ভদ্রলোক বললেন, বৌ আর কোথায় সুন্দরী! তার বয়স হয়েছে। ছেলে এখন আয়নার সামনের দাঁড়িয়ে টেরিকেটে চুল আঁচড়াতে শিখেছে আর মেয়ে দুটির বয়স বাড়ছে, আমার কাপড়ের দোকানটা ভালো চলছে না তাই তাদের ভালো করে বিয়ে দিতে পারছিনা। তখন সাধুবাবা বললেন, এটাই হলো আসল কারণ। তুই আসলে যেভাবে জীবনটা উপভোগ করতে চাইছিস সেই ভাবে পারছিস না। তাই তুই জীবন থেকে পালতে চাস। তোর এই যুগল দর্শন সম্পূর্ণ ঘুচে যাবে যদি এখনই তোমার কোনো মারণ রোগ ধরা পরে। তখন তুই এই পরিবারের কাছেই ফিরবি কারণ তখন তোর কাছের মানুষের সেবা চাই।
বন্ধুরা অনেকেই ত্যাগ বা অনাসক্তি আর পালিয়ে যাওয়ার মধ্যে অনেক তফাৎ। তাই যদি দেখেন আপনার প্রিয় মানুষটি কর্মের বিষয় ভীষণ সজাগ কিন্তু ফলের সময় সে ভীষণ উদাসীন তাহলে তাকে ভুল বুঝবেন না। তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন না। আপনার সংসারের প্রতি অনাসক্তি কারণটা কি খুঁজে দেখুন। সেটা কি সত্যি অনাসক্তি না শুধুমাত্র মনের মত করে পাচ্ছেন না বলে তা থেকে এড়িয়ে যেতে চান। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
এই বিষয়ে আরও বিশদে জানতে আমরাদের Bengal Fusion চ্যানেলটিকে সাবস্ক্রাইব করুন এবং নীচে দেওয়া ভিডিওর লিঙ্কটিতে ক্লিক করুন।