বাঁশবেড়িয়া হংসেশ্বরী মন্দির

প্রখ্যাত কবি পিনাকী ঠাকুর এবং নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের জন্মভিটে বাঁশবেড়িয়ার কথা অনেকেরই জানা। তবে শুধু সাহিত্যপ্রেমীরা নন, ভ্রমণপ্রেমীরাও এখানে আসেন এই জায়গার ইতিহাস জানার আগ্রহে। ঠিক সেই রকমই বাঁশবেড়িয়ার একটি বিখ্যাত জায়গা হল হংসেশ্বরী মন্দির। এই মন্দিরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই জায়গার রাজপরিবারের অনেক কাহিনি।
বর্ধমানের পাটুলি ছিল বাঁশবেড়িয়া রাজপরিবার দত্তরায়দের আদি নিবাস। মুঘল সম্রাট আকবরের কাছ থেকে এই রাজপরিবার রায় উপাধি পেয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে মজুমদার উপাধি লাভ করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য সেই সময় মজুমদার উপাধিতে ভূষিত মাত্র চারটি পরিবারের মধ্যে কৃষ্ণনগরের রাজপরিবারের সদস্য ভবানন্দের নাম উল্লেখযোগ্য। ১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে এই দত্তরায় পরিবারের আদিপুরুষ রাঘব দত্তরায় মুঘল সম্রাট শাহজাহানের কাছ থেকে সাতগাঁও, বর্তমানে যার নাম সপ্তগ্রামের ২১টি পরগণার জমিদারির জায়গীর লাভ করেছিলেন। এরপর রাঘব দত্তরায়ের পুত্র রামেশ্বর দত্তরায় বাংলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ৩৬০টি পরিবার নিয়ে বংশবাটীতে চলে আসেন। এরপর দিল্লির সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সঙ্গে রাজস্ব ব্যবস্থা প্রণয়ন সম্বন্ধে উল্লেখযোগ্য দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সম্রাট খুশি হয়ে রামেশ্বরের পরিবারকে রাজা-মহাশয় উপাধিতে ভূষিত করেন। এর কিছুদিন পর বাঁশবেড়িয়ায় বর্গী আক্রমণর ফলে শ্মশানে পরিণত হয়। এই সময় রাজা রামেশ্বর বর্গী আক্রমণ থেকে বাঁচবার জন্য একটি বাঁশবন পরিষ্কার করে মাইল খানেক জায়গা জুড়ে পরিখা বেষ্টিত একটি দুর্গ নির্মাণ করেন; তারপর থেকে এই জায়গার নাম হয় বাঁশবেড়িয়া। তবে লোকমুখে এই দুর্গটি গড়বাটী নামে প্রসিদ্ধ।
রাজা রামেশ্বর রায়ের প্রণাম প্রপৌত্র নৃসিংহদেব রায় বাঁশবেড়িয়া হংসেশ্বরী মন্দির নির্মাণকার্য শুরু করেন। এরপর সময়ের সাথে সাথে সবকিছুই পরিবর্তন হতে থাকে। নৃসিংহ দেবের পিতা গোবিন্দ দেবের মৃত্যু হলে তাদের জমিদারি বেশ কিছু অংশ হাতছাড়া হয়ে যায়।

Hangseshwari Temple - Wikipedia

পরবর্তীতে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরে ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা হয়। কিন্তু ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরের কাজ অসম্পূর্ণ রেখে নৃসিংহদেব মারা যান। ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে নৃসিংহদেবের দ্বিতীয় স্ত্রী রাণী শঙ্করী অসমাপ্ত কাজটি সম্পন্ন করেন। মন্দিরটি তৈরীর জন্য উত্তর প্রদেশের চুনার থেকে পাথর এবং রাজস্থানের জয়পুর থেকে কারিগরদের নিয়ে আসা হয়।
উত্তর রাজস্থানের শেখাওয়াতি হাভেলি নির্মাণশৈলীর ধারা  লক্ষ্য করে এই মন্দিরটি স্থাপত্য কারুকার্য করা হয়। প্রায় ৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয় মন্দির নির্মাণে। ৭০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট দক্ষিণমুখী এই হংসেশ্বরী মন্দিরের সামনে রয়েছে বারান্দা ও ইটের বাঁধানো চত্বর। পাঁচতলা মন্দিরটির আটকোণে ৮টি, মধ্যস্থলে ৪টি, কেন্দ্রস্থলে ১টি অর্থাৎ মোট ১৩টি চূড়া রয়েছে। মধ্যস্থলে চূড়ার নিম্নাংশের প্রকোষ্ঠে একটি সাদা রঙের শিবলিঙ্গ রয়েছে। প্রত্যেক চূড়ার শীর্ষভাগ মোচাকৃতি পদ্মকোরকরূপী।
জানা যায়, তান্ত্রিক সাধনা ষটচক্রভেদের তত্ত্বকে অনুসরণ করে এই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়

Hangseshwari Temple / Hanseshwari Temple, Hooghly - Timings, History, Best  time to visit

এমনি বিভিন্ন তথ্য পেতে Bengal Fusion News Time সাবস্ক্রাইব করুন আর নিচের লিংকটি ক্লিক করুন।
 

অনুলিখন: 
Oindrila Chakraborty
ll