আপনার সন্তান কি মানসিক চাপে ভুগছে? কিভাবে বুঝবেন? | মনোবিদ কি বলছেন | Dr. Tanmoy Mitra

আমরা দেখি আমাদের আশেপাশে যে সমস্ত শিশু কিশোররা ঘোরাঘুরি করছে বা খেলে বেড়াচ্ছে তারা সবাই প্রানোচ্ছল, হাসিখুশি। বর্তমান জগতে বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায় আমাদের সকলকেই হাসি মুখ দেখাতে হয়। তবে আমরা কি ভেবে দেখি বাচ্চাদের এই যে হাসি মুখ সেটা আদৌ কি সত্যি হাসি নাকি মুখোশ! মনোবিদরা কিন্তু এটা বলছেন না যে, সব বাচ্চাই অসুখী তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে বাইরে যে বাচ্চাটি হাসিখুশি ছিলো, মনোবিদের কাছে এসে সে এমন অনেক কথাই বলে যা তার আনন্দের কথা না।

এতো গুলো কথা বলার উদ্দেশ্য হলো যে, আপনি যদি আপনার বাচ্চার মধ্যে যে সমস্যা গুলো চলছে, শুধু আপনার বাচ্চা না প্রতিবেশীর বাচ্চা বা আপনার আত্মীয়দের মধ্যেও যদি কোনো শিশুর এই ধরনের সমস্যা গুলো আপনি নিজে কথা বলে বুঝতে পারেন কিছুটা, তাহলে পরবর্তী কালে বড়ো কোনো সমস্যার থেকে তাকে উদ্ধার করতে পারবেন। অর্থাৎ তার তখন আর ডাক্তারের দরকার হবে না। সে আপনার হাত ধরেই বেরিয়ে আসতে বাড়বে।

 

— সন্তান মানসিক চাপে আছে কিভাবে বুঝবেন:

• দেখা যাক বাচ্চাদের প্রথম স্ট্রেস বা মানসিক চাপের জায়গা কোনটা! সেটা হলো স্কুল। আমরা স্কুল সম্পর্কে অনেক ভালো ভালো কথাই শুনেছি, কিন্তু একটু নিজেদের প্রথম স্কুল জীবনের কথা ভাবলেই মনে পড়বে যে, স্কুলের প্রথম দিনগুলো কিন্তু কখনই সেভাবে আনন্দের হয়না। কারণ হলো অ্যাডজাস্টমেন্ট বা মানিয়ে নেওয়া। নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষজনের সাথে তাকে মানিয়ে নিতে হয়। বাড়ি ফিরে বাচ্চাটা যাতে চুপ করে না থাকে, কথা বলার সুযোগ পায় সেদিকে কিন্তু নজর দিতে হবে। কথা বলে বুঝে নিন বাচ্চাটা স্কুলে গিয়ে খুশি তো! কোনো সমস্যা নেই তো!

• শিক্ষক-শিক্ষিকার সাথেও অনেক সময় বাচ্চাদের সমস্যা তৈরী হয়। সেটা যে, সব সময় শিক্ষক-শিক্ষিকার দোষের ফলে হয় তা নয়। এতো গুলো বাচ্চাকে একসাথে সামলানোর সময় কিছু সমস্যা তৈরী হয়।

• আরেকটি সমস্যা হলো, বুলিং বা সাধারণ বাংলায় বলে পিছনে লাগা। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, স্কুলে অনেক ছেলে বা মেয়েরা থাকে যারা আপনার বাচ্চার পিছনে লাগে, আপনার বাচ্চাকে জ্বালাতন করে। যার ফলে আপনার বাচ্চার মধ্যে একটা ইন্সকিউরিটি তৈরী হয়। সেখান থেকে সে মানসিক চাপে ভুগতে থাকে।

bullying-g96dc3809f_1920_0.jpg

• বাচ্চা দ্বিতীয় তৃতীয় শ্রেণীতে উঠলে তার নতুন বন্ধু হচ্ছে। বন্ধু মানেই আনন্দের ব্যাপার। কিন্তু বন্ধু মানেই সব সময় আনন্দের ব্যাপার তাও নয়। অনেক সময় আপনার বাচ্চার সাথে তার বন্ধুদের সমস্যা হচ্ছে। সেই সমস্যা আপনার বাচ্চারও থাকতে পারে। তবে সেটা কথা বলে জানতে হবে। কারণ সমস্যাটা কোথায় বুঝতে না পারলে সেটার সমাধানও সম্ভব নয়। 

• পরবর্তী যে সমস্যাটা তৈরী হয় সেটা হলো পড়াশোনার ক্ষেত্রে। এখন সমস্ত স্কুলেই পড়াশোনার চাপ খুব বেশি। সেখানে আপনার বাচ্চা মানিয়ে নিতে পারছে কি না! বা সে সেই চাপ সামলাতে পারছে কিনা সে বিষয় নজর রাখতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন অভিভাবকের বিভিন্ন প্রত্যাশা থাকে সেগুলোকে পূরণ করার ক্ষেত্রেও বাচ্চাদের ওপর একটা চাপ থাকে।

child-g12d290b4d_1920_0.jpg

• শেষ হলো অজানা পৃথিবীকে জানা। অর্থাৎ আমাদের বাচ্চাদের কাছে এই অজানা নিষিদ্ধ জগতের উন্মোচন তাদের মধ্যে মানসিক চাপের সৃষ্টি করে। কারণ তারা এই বিষয় বাবা-মার সাথে কথা বলতে পারে না।

সর্বোপরি আপনার বাচ্চার সাথে কথা বলুন। তার সাথে সময় কাটান, বন্ধুর মত মিশুন। বাচ্চার মধ্যে চলতে থাকা সমস্যাগুলোকে বোঝার চেষ্টা করুন। কারণ একটু সময় আর যত্ন আমাদের সবাইকেই অনেকটা ভালো রাখতে পারে।

boys-ge368c2d74_1920_0.jpg

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। এই বিষয়ে আরও বিশদে জানতে আমরাদের Bengal Fusion চ্যানেলটিকে সাবস্ক্রাইব করুন এবং নীচে দেওয়া ভিডিওর লিঙ্কটিতে ক্লিক করুন।

অনুলিখন: 
মণিদীপা গায়েন
ll