শিশুদের তড়কা কেন হয়? কিভাবে চিকিৎসা করবেন? | Know about fever | Dr. Shamik Ghosh

জ্বর নিয়ে আমাদের সবারই মধ্যেই একটা ভয় কাজ করে। এই জ্বর কেন হয়? আমাদের শ্বাসনালী দিয়ে, খাদ্যনালী দিয়ে কিংবা মূত্রনালি দিয়ে যদি জীবাণু আমাদের শরীরে প্রবেশ করে এবং সেটা যদি বমির মাধ্যমে, হাঁচির মাধ্যমে বা মলত্যাগের মাধ্যমে না বেরিয়ে যায়। তাহলে সেটা আমাদের রক্তে মিশে যায়। রক্তে মিশে গেলে আমাদের রক্তের শ্বেতাকণিকা সেই জীবাণুকে ট্র্যাপ করবে, মারবে এবং যার ফলে একধরের টক্সিন নির্গত যাকে পাইরোজন বলা হয়। আর এই টক্সিন থেকেই জ্বর হয়।

সুতরাং, জ্বর কথাটির অর্থ হলো আমাদের শরীরের যা তাপমাত্রা তারচেয়ে বেশি তাপমাত্রা আমাদের শরীরে দেখা দেওয়া। এই জ্বরটা কেন হচ্ছে, কারণ আমাদের শরীর সম্পূর্ণ ভাবে একটা জীবাণুকে মারতে সক্ষম হচ্ছে। ধরুন আপনার শরীরে একাধিক জীবাণু প্রবেশ করলো এবং আপনার শরীর জীবাণু মারতে ভীষণ সক্রিয়। যার ফলে আপনার শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু আমাদের মস্তিষ্কে থ্যালামাস নামক একটা অংশ থাকে, যা আমাদের দেহের তাপমাত্রাকে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে বাঁধা দেয়।

 

•জ্বর তড়কা কী?

 

শিশুদের ছ'বছর বয়স পর্যন্ত মস্তিষ্কের থ্যালামাস নামক অংশটা ওতো পরিণত হয়না। তাই কোনো কারণে যদি শিশুর হঠাৎ করে দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় তাহলে সেটা একটা খিঁচুনির সৃষ্টি করে। জ্বরের সময় এই ধরণের খিঁচুনিকেই বলা হয় জ্বর তড়কা।

 

জ্বর তড়কা ১০% শিশুর মধ্যে দেখা যায়, ফলে এটা খুব সাধারণ একটা ব্যাপার। শিশুর প্রথম জ্বর তড়কা সব বাবা মার কাছেই একটা আতঙ্কের ব্যাপার। এক্ষেত্রে বাচ্চার মুখ বেঁকে যেতে পারে, চোখ উল্টে যেতে পারে, হাতে পায়ে খিঁচুনি ধরে যায় এবং মুখ থেকে ফেনা বেরোতে থাকে। তবে এই অবস্থা দশ মিনিটের বেশি থাকে না। এটা দশ মিনিট পরেই নিজে থেকেই কমে যায়।

 

• বাচ্চার জ্বর তড়কা হলে কী করবেন?

 

প্রথমবার যদি বাচ্চার জ্বর তড়কা দেখেন তাহলে তার চারপাশে ভিড় করবেন না। অক্সিজেন আসতে দেবেন। তাকে পাশ ফিরিয়ে শোয়াবেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাবেন। বাচ্চার মুখের মধ্যে কিছু গুঁজে দেবেন না বা হাত-পা চেপে ধরার চেষ্টা করবেন না।

 

জ্বর তড়কার বৈশিষ্টই হলো, এটা একবারই হবে ২৪ ঘন্টায় দ্বিতীয়বার তা আর হবে না। এবং এটা নিজে থেকেই দশ মিনিটের মধ্যে কমে যাবে। ডাক্তারেরা প্রথমবার শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন কারণ, তারা যাতে এই জ্বর তড়কার বৈশিষ্ট গুলো পর্যবেক্ষণ করে, তাকে একটা চিকিৎসা দিতে পারেন।

 

যদি কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তড়কা হচ্ছে কিন্তু জ্বর নেই বা দশ মিনিটের পরেও সেটা ঠিক হয়নি। আবার হয়ত হাত পায়ে কিছু হয়ননি, শুধু চোখটা উল্টে গেছে তাহলে আরেকটু ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। একবার যদি জ্বর তড়কার চিকিৎসা হয়ে যায় তাহলে আপনার শিশুকে ছ'বছর পর্যন্ত সাবধানে রাখতে হবে।

 

• কিভাবে শিশুর যত্ন নেবেন?

 

দু'ভাবে শিশুর খেয়াল রাখা যায়, এক জ্বর হলে কী করবেন আর দুই বাড়িতে তড়কা হলে কী করবেন।

 

বাচ্চার জ্বর এলে প্রথমেই প্যারাসিটামল ট্যাবলেট, সিরাপ বা প্যারাসিটামল ড্রপ খাইয়ে দিন বাচ্চাকে। তার সাথে ঈশাৎ উষ্ণ গরম জল দিয়ে বাচ্চার হাত, পা ও কপাল মুছিয়ে দিন। যাতে বাচ্চার গায়ের তাপমাত্রা আরও বাড়তে না পারে।

 

অনেক সময় কিছুতেই তাপমাত্রা কমানো যায় না বা আপনার বোঝার আগেই তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে বাচ্চার তড়কা দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে যদি পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে বাচ্চার আশেপাশে ভিড় করতে দেবেন না, তাকে যে-কোনো একদিকে পাশ ফিরিয়ে শুয়ে দিন এবং Nezalast spray নাকে দিয়ে দিন। তবে এক্ষেত্রে ড্রপের পরিমানটা ডাক্তারের থেকে জেনে নেবেন। এগুলো করলেই সাধারণ তড়কা পাঁচ মিনিটে কমে যায়। এরপর অবশ্যই একজন ভালো চিকিৎসক কে দেখিয়ে নেবেন।

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। এই বিষয়ে আরও বিশদে জানতে আমরাদের Bengal Fusion চ্যানেলটিকে সাবস্ক্রাইব করুন এবং নীচে দেওয়া ভিডিওর লিঙ্কটিতে ক্লিক করুন।

অনুলিখন: 
মণিদীপা গায়েন
ll