কোমর থেকে পায়ের দিকে ব্যথা কেন হয়? কিভাবে নিরাময় সম্ভব? | Slipped Disc/ Sciatica Pain | Dr. Debjyojoti Dutta

আমাদের বয়স বাড়লে বিভিন্ন রোগের উপদ্রব শুরু হয় শরীরে। কখনও এখানে ব্যথা তো কখনও ওখানে। যার ফলে শরীর ব্যস দুর্বল হয়ে পড়ে। কিছু ক্ষেত্রে তো আমরা শয্যশায়ীও হয়ে পড়ি। কিন্তু বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞান এই অনেক দুরূহ ব্যথার চিকিৎসা করতে সক্ষম হয়েছে। আজ আমরা জানবো কোমর থেকে পায়ের দিকে ব্যথা কেন হয়? এই ধরণের সমস্যাকে বলা হয় Slipped Disc বা Sciatica Pain ।

• Slipped Disc/ Sciatica Pain কী?

কোমর থেকে পায়ের দিকে নেমে আসা ব্যথা। এক্ষেত্রে জ্বালাভাব, অবশ ভাব হয়ে থাকে এবং সাধারণত কোমর থেকে জেলি বেড়িয়ে তা স্নায়ুর ওপর চাপ সৃষ্টি করলে এই ধরণের ব্যথার উৎভব হয়।

• Sciatica Pain কেন হয়?

Sciatica কেন হয় এটা এক কথায় বলা সম্ভব নয় কারণ একটি মাল্টিফ্যাক্টরিয়াল অর্থাৎ বিভিন্ন কারণ একত্রিত হয়ে এই রোগটি সৃষ্টি হয়। সাধারণ ভাবে বললে, এই সমস্যা মূলত অতিরিক্ত ওজনের জন্যে, দিনের অধিকাংশ সময় বসে থাকার জন্যে যেমন হয়, তেমনি কোনো রকম ক্ষত থেকেও এই ব্যথার উৎপত্তি হয়।

• কিভাবে এই সমস্যার উৎপত্তি হয়?

আমাদের স্পিনাল কোডে কতগুলো হাড় আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে জায়গা গুলো প্রভাবিত হয় সেগুলো হলো L4, L3, S1 অর্থাৎ স্পিনাল কোডের নিচের দিকের অংশ। এই কোডে যে ছোটো ছোটো হাড় গুলো থাকে তাকেই বলা হয় Disc। এগুলো অনেকটা জেলি ভরা বেলুনের মত অংশ। এর ঠিক পিছন থেকে স্নায়ু বেড়িয়ে পা পর্যন্ত যায়। সাধারণত এই Disc গুলো ক্ষয় পেতে পেতে তার  থেকে জেলি বেড়িয়ে স্নায়ুর চারপাশে একটা প্রবাহ তৈরী করে। যা একটা তরঙ্গ তৈরী করে এবং এই তরঙ্গ মস্তিকে গিয়ে ব্যথার অনুভূতি দেয়।

• Sciatica হলে কিভাবে বুঝবেন?

সাধারণত Accurate Sciatica হলে প্রচন্ড ব্যথা হয়। জ্বালা ভাব, চিনচিনে ব্যথা এবং অবশ ভাব লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে Disc -এর উচ্চতা অনুযায়ী ব্যথা হয়। যেমন সবচেয়ে নীচের Disc -এ সমস্যা হলে তা সোজা পায়ের কেড়ে আঙুলে আঘাত করে, তার

ওপরের দিকের Disc হলে সেখান থেকে ব্যথা বুড়ো আঙুলের দিকে যায়। এক্ষেত্রে রোগীকে শুয়ে পা গুলো একটা একটা করে ওপরের দিকে তুললে, দেখা যাবে পায়ের পিছন দিকে অসম্ভব টান এবং ব্যথা অনুভত হচ্ছে। এক্ষেত্রে পায়ের পেশী বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে।

• রোগ নির্ণয় কিভাবে করা হয়?

এই Slipped Disc এর ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলো এম. আর. আই। এর মাধ্যমে Disc এর একটা পরিষ্কার ছবি পাওয়া যায়। যার সাহায্যে দেখা যায় যে, Disc এর হেলথ ঠিক আছে কিনা, Disc এ পর্যাপ্ত জল আছে কিনা এবং জেলের প্রবাহ কী রকম। এই রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এম. আর. আই আর ক্লিনিকাল এক্সামিনেশন অর্থাৎ রোগীকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করা। এই দুটি পদ্ধতিতে রোগ নির্ণয়ের পরেই চিকিৎসা শুরু হয়।

• কিভাবে চিকিৎসা করা হয়?

 যদি Sciatica -র পরিমান কম হয় তাহলে শুধুমাত্র ওষুধ দিয়েই তা নিরাময় করা যায়। যাদের ওষুধ খেয়েও রোগের নিরাময় হয় না, তাদের জন্যে আলাদা আলাদা চিকিৎসা পদ্ধতি আছে, রোগীর অবস্থা অনুযায়ী। প্রথমত, ইনজেকশনের মাধ্যমে Disc থেকে জেলের প্রবাহ অনেকটা রোধ করা হয় এবং স্নায়ুর ওপর যে চাপ সৃষ্টি হয় তা অনেকটা কমানো যায়। এই পদ্ধতিতে কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। এটা কয়েক ঘন্টা হাসপাতালে থেকেই করা সম্ভব, তার জন্যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কোনো দরকার নেই। এছাড়াও আরও একটি পদ্ধতি আছে যা হলো, ওজোন নিউট্রালিসিস। এর মাধ্যমে ওজোন (O³) গ্যাস Disc এর মধ্যে দেওয়া হয় যা, Disc -কের ভিতরে ডিহাইড্রোশন তৈরী করে। যার ফলে Disc গুলো সংকুচিত হয়ে যায় এবং স্নায়ুর জায়গাটা পরিষ্কার হয়ে যায়।

তবে কিছু কিছু জটিল ক্ষেত্রে যখন দেখা যায় যে, রোগীর পা পুরো অবশ হয়ে যাচ্ছে তখন সাথে সাথে অপারেশন করে এই Disc বাদ দেওয়া হয়। সুতরাং, চিকিৎসা করতে হবে রোগীর অবস্থার ওপর ভিত্তি করে।

• কিভাবে Slipped Disc প্রতিরোধ করবো?

১) অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে। পরিমিত ডায়েটের মাধ্যমে নিজের ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

২) হঠাৎ করে সামনের দিকে ঝুঁকে কোনো ভারী জিনিস তুলবেন না।

৩) নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্য খান এবং শরীরের যত্ন নিন।

সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। এই বিষয়ে আরও বিশদে জানতে আমরাদের Bengal Fusion চ্যানেলটিকে সাবস্ক্রাইব করুন এবং নীচে দেওয়া ভিডিওর লিঙ্কটিতে ক্লিক করুন।

অনুলিখন: 
মণিদীপা গায়েন
ll