করোনা (COVID-19) আবহাওয়ায় 2021 কেমন যাবে? কিছু পরামর্শ আর সতর্কতা মেনে চলুন— Dr. Sumon Poddar.
তাই বলা বাহুল্য ভালো মন্দ মিশিয়ে, উত্থান পতনকে গ্রহণ করেই মানুষ একটা বছর অতিক্রম করলো। তবে এই করোনার সাথে গোটা একটা বছর ঘর করতে করতে মানুষ করোনাকে জয় করতে না পারলেও, ভিতরে একটা ডোন্ট কেয়ার মনোভাব চলে এসেছে। এই পুরো শীতকাল সহ উৎসবের মরশুমে মানুষের মধ্যে মাস্ক না পরা, বাড়ি ফিরে স্নান না করা এবং ভিড়ের মধ্যে যেমন খুশি ভাবে চলা ফেরার প্রবণতা বেড়েছে। তাহলে এখন মনে হতেই পারে যে কী করবো?! বেরোবো না বাইরের! এই উৎসবের মরশুমকে উপভোগ করবো না! না, একদমই তা নয়। আমরা করোনার আতঙ্কে ঘরে বসে থাকবো না কিন্তু সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও নেবো।
তাহলে আসুন এই করোনা অবহাওয়া কিভাবে সব দিক বজায় রেখে সুস্থ থাকা যায় সে বিষয় Bengal Fusion এর তরফ থেকে Dr. Sumon Poddar ( MBBS, DCH, MD Consultant Pead. Associate Prof. Incharge of Molecular Biology, ICH Kolkata) এর কিছু পরামর্শ রইলো।
• Dr. Sumon Poddar— এর বিশেষ সাক্ষাৎকার:
১) বর্তমানে মানুষের মধ্যে এই করোনা (COVID-19) আবহাওয়া লড়াই করতে করতে একটা ডোন্ট কেয়ার মনোভাব চলে এসেছে। বেপরোয়া ভাবে রাস্তায় চলাফেরা করছেন অনেকেই। এ বিষয় আপনার কী মতামত?
উঃ দেখুন করোনা যায়নি এবং করোনার সাথে আমাদের লড়াই চালাতে হবে। এখন এই করোনা ভাইরাসটি বিভিন্ন ভাবে মিউটিয়েট করছে, আমরা এতো দিন জানতাম যা কিছু মিউটেশন হচ্ছে তা স্পাইক প্রোটিনের ওপর অতটা প্রভাব ফেলেনি। তবে নতুন যে ভাইরাসটি আসছে, যে গুলো UK বা South Africa তে দেখা যাচ্ছে এ গুলোর গঠনগত পরিবর্তন এতোই হয়ে যাচ্ছে যে ১৭ থেকে ২০'টার মত মিউটেশন এক্সসিস্টিং সার্চ কপি ২ থেকে বেশি হয়ে যাচ্ছে তার ফলে স্পাইক প্রোটিনেও কিছু কিছু চেঞ্জস আসছে। তার ফলে যে ভ্যাকসিনটি তার এফিক্যাসি কতটা হবে সে বিষয় আমাদের একটা প্রশ্ন চিহ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তবে আমরা আশা রাখি যে ভ্যাকসিন গুলো তৈরী হচ্ছে সেগুলো প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা প্রযুক্তিতে তৈরী হচ্ছে যা ৬০-৭০% সুরক্ষা দেবে। যদিও সেটা সময় সাপেক্ষ সময়ই বলবে কতটা কি হবে! এই পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের মধ্যে যে ডোন্ট কেয়ার ভাবটা চলে এসেছে তা বিপদ ডেকে আনার পক্ষে যথেষ্ট। যেমন UK তে যে ভাইরাসটা দেখা যাচ্ছে তাতে কিলার পাওয়ারটা কম কিন্তু ইনফেক্টিভিটিটা বেশি আপাত দৃষ্টিতে তা মনে যাচ্ছে। আবার South Africa তে যে স্ট্রেইনটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে ইনফেক্টিভিটি তাও বেশি এবং কিলিং পাওয়ারটাও হয়তো বেশি। ফলে এই সব গুলো মিলিয়ে যেখানে ধোঁয়াশা তৈরী হচ্ছে তাতে আমাদের পার্সোনাল প্রটেক্টিভ গিয়ার্স কখনই নামানোর সময় হয়নি। আর হুট্ করেই বেশ কিছু পসিটিভিটি বেড়ে গেছে।
২) শীতকালে করোনা সংক্রমন বাড়ে, এবিষয়ে আপনার কী মতামত?
উঃ দেখুন আপাত দৃষ্টিতে বেঙ্গলে এখন করোনার সংক্রমন কমছে ৮% এর নীচে নেমেছে , তবে তার পিছনে অনেক কারণ আছে সে বিষয় তর্ক-বিতর্কের জায়গা নয় এটা। তবে এটাও ঠিক করোনা তো খুব ক্লোস প্রক্সিম্যাটিতে ছড়ায় এবং আমরা শীতকালে খুব গা ঘ্যাসাঘ্যাসি করে থাকতে পছন্দ করি। এছাড়া বাইরে থেকে এসেই হাত পা ধোয়া বিষয়ও আলিস্যি চলে এসেছে। কিংবা বারবার হাত ধোয়া বা হাত স্যানিটিজ করার প্রবণতা এই শীতের মরশুমে মানুষের মধ্যে কমতে থাকে। সত্যি একটা সমস্যার দিক। আমাদের যে উলেন্স যেগুলো আমরা পরি, সেগুলো তো রোজ কাচতে পারছিনা। সুতরাং সে বিষয় একটা মাঝামাঝি ব্যবস্থা নিতে হয়। ওই উলেন্সগুলো যদি উলিকেট হয় তাহলে তার বাইরের এক্সপোসার কম। ফলে তাকে বারান্দায় বা কোনো সেপারেট জায়গায় দু-তিন দিন ঝুলিয়ে রেখে আমরা তারপর ব্যবহার করতে পারি।
৩) করোনার ভয় নিজেকে সুস্থ রাখতে অনেকেই বিভিন্ন ওষুধ খেতে শুরু করেছেন, পেপারে পড়ে বা হোয়াটস্যাপে দেখে, সোশ্যাল মিডিয়াতে শুনে কিংবা চেনা পরিচিত কাউর করোনা হয়েছিলো তার থেকে শুনে। এই বিষয়টা কতটা সুরক্ষিত বা বিপদজনক বলে আপনার মনে হয়?
উঃ দেখুন এখনও কোনো অল্টারনেটিভ ওষুধ বা টোটকা যেগুলো ঘরোয়া টোটকা বলে আর কী সেরকম এখনও কিছু নেই, বৈজ্ঞানিক ভাবে এখনও কিছু নেই যা আমাকে কোভিড থেকে বাঁচায়। একমাত্র কোভিডের ভ্যাকসিন এলে তবে আমরা কিছুটা সুরক্ষিত হতে পারি এটা আমরা চিকিৎসক হিসাবে আশা করি কিন্তু এছাড়া আমরা এই ঘরোয়া টোটকা বা অল্টারনেটিভ মেডিসিন মানতে বারণ করি। এর কারণ দুটো— ১) এগুলোর কোনো বিজ্ঞান ভিত্তিক কোনো রকম কোনো বেসিস নেই। ২) এগুলো করার ফলে মানুষের মধ্যে একটা অদ্ভুত কেয়ারলেসনেস ভাব চলে আসছে। এতোক্ষণ ধরে যারা একটা গার্ড নিয়ে চলছিলেন তারা হঠাৎ করে খুব ক্যাজুয়াল হয়ে যাচ্ছেন, যেটা কিন্তু কোনোভাবেই কাম্য নয়।
৪) বর্তমানে মাস্ক বা মুখোশ এখন বহুল প্রচলিত এবং এখন শাড়ির সাথে জামাকাপড়ের সাথে ম্যাচিং করে মাস্ক পরা একটা চল শুরু হয়েছে। এ বিষয় প্রশ্ন হলো যে, এই ধরণের মাস্কগুলো কতটা নিরাপদ বা মাস্কের কোনো বিশেষ ধরণ যা ম্যাচিং না হলেও পরা উচিৎ এমন কী কিছু আছে?
উঃ দেখুন মাস্ক প্রধানত তিনরকমের প্রথম যেটা হলো কাপড়ের মাস্ক, সিম্পল মাস্ক জনসাধারণের জন্য। কমন যে জন সমাগম যদিও তা উচিৎ নয় কিন্তু মানুষ প্রাকটিক্যালি মানছে না। ফলে যদি ওয়ান ইস্টু ওয়ান ইন্টারেকশন হয় তবে সেক্ষেত্রে এই কাপড়ের মাস্ক যথেষ্ট। হোকনা সেটা স্টাইল স্টেটমেন্ট তাতে কোনো ক্ষতি নেই। তবে সেটা পাতলা ফিনফিনে কাপড়ের হলে তা কখনই কাম্য নয়।
আবার আমরা যখন হাসপাতালে যাবো হয়তো আমার কোনো করোনা রোগীর সাথে ক্যাজুয়াল ইন্টারেকশনে আসতে পারি তবে সেক্ষেত্রে সার্জিকাল মাস্ক ব্যবহার করা উচিৎ। তবে সার্জিকাল মাস্ক কিন্তু ইউস এন্ড থ্রুও যেটা কাপড়ের মাস্কের ক্ষেত্রে আবার কেচে রিইউস করা যায়।
তিন নম্বর হলো N95 মাস্ক। এই মাস্ক ফ্রন্ট লাইনারদের জন্যে। জনসাধারণের ক্ষেত্রে এই মাস্ক ব্যবহারের কোনো যৌক্তিকতা নেই। যদি না আপনি কোনো করোনা আক্রান্ত এক্টিভ স্টেজ রোগীর কন্টাক্ট এ আসেন। যেমন সুইপার, দমকল কর্মী ইত্যাদি।
৫) মাস্ক কতক্ষন পরে থাকবো? মানে ধরুন আমি রাস্তা দিয়ে বাইক চালাচ্ছি তেমন কোনো ভিড় রাস্তা নয়, তাও কি মাস্ক পরে থাকবো?
উঃ না তবে বাইক চালানোর সময় মাস্ক পরে থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তবে আমাদের এও মনে রাখতে হবে যে, যদি কোনো সিগন্যালে দাঁড়ায় আর সেখানে যদি কেউ হেঁচে দিলো বা কেশে দিলো তাহলে কিন্তু আমরা তার ৩ ফুটের দূরত্বের মধ্যে চলে এলাম। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তাই ধরে নেওয়া যায় বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, যেখানে যাচ্ছি সেখানে যদি ট্রাফিক থাকে তাহলে বাইকে মাস্কটা পরে নেওয়া ভালো। আবার যদি ধরুন হাইওয়েতে যাচ্ছি সেক্ষেত্রে মাস্কটা না পরলেও চলে কারণ সেখানে আমরা ডাইরেক্ট কাউর সাথে কন্টাক্টে আসছি না।
৬) আচ্ছা ঠিক কোন সময় একজন মানুষের করোনা পরীক্ষা করা উচিৎ, অর্থাৎ জ্বর সর্দি-কাশি তো প্রতিবছরই হয়। তাহলে কীভাবে বুঝবো যে এখন করোনা পরীক্ষা করা উচিৎ?
উঃ সত্যি কথা বলতে করোনা ভাইরাসকে অন্য ভাইরাসের থেকে আলাদা করা মুশকিল। এখন অতিমারী চলছে ফলে এখন যদি সেই পেসেন্টের কো-মরফিট কন্ডিশন থাকে তাহলে তার সাধারণ সর্দি-কাশি হলেও তাকে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে ষাটের উর্ধে বা পঞ্চাশ বছর বয়সী বৃদ্ধ মানুষের ক্ষেত্রে যাদের ডায়াবেটিক আছে, রেনাল ডিজিস কিংবা ক্রনিক লাং ডিজিস আছে তাদের ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া দরকার, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা করানো দরকার। আবার অন্যদিকে ধরি, আমার কোন কো-মরবিডিটি নেই একদম ইয়ং, তাহলে কি আমার সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই? একদমই না। আমরা এমন অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি যে, কোভিডি তাদের শরীরেও এমন থাবা বসিয়েছে যা তাদের প্রাণনাশের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে এর কোন হার্ড এন্ড ফাস্ট কোন রুল নেই যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে যে, আমার কোভিডি টেস্ট করাতে হবে।
তবে কয়েকটা জিনিস কিছু বিষয় ইন্ডিকেট করে যেমন সাধারণ যে ইনফ্লুয়েন্সজা বা সিজেনাল ফ্লু তাতে গা ম্যাচম্যাচ ভাবটা বেশি থাকে কিন্তু কোভিডের ক্ষেত্রে উইকনেসটা বেশি থাকে। ফ্লুতেও উইকনেস হতে পারে তবে করোনার ক্ষেত্রে উইকনেসটা সাধারণ বেশি হয়। করোনার ক্ষেত্রে প্রচুর রানিং নোস অর্থাৎ নাকের জলে চোখের জলেটা কম হয়। আর এখন তো লোকের মুখে মুখে ছড়াচ্ছে যে, নাকে গন্ধ পাচ্ছি না মুখে স্বাদ পাচ্ছি না। এটা করোনার কোন স্পেসিফিক সিমটম নয়। এটা যে কোন ভাইরাসের ক্ষেত্রেই পসিবেল কিন্তু এই পান্ডেমিকের সময় যদি কাউর এই সিমটমটা ডেভেলপ করছে তাহলে তার এলার্ট হওয়া উচিৎ।
এন্ড লাস্টলি, যদি মনে হয় যে আমার শ্বাসের কষ্ট হচ্ছে বা বুকে চাপ চাপ লাগছে কিংবা আমার সর্দি-কাশির তুলনায় উইকনেসটা বেশি তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে একবার করোনা পরীক্ষা করা উচিৎ।
৭) এখন স্যানিটাইজার ঘরে বাইরের সর্বত্রই বহুল ব্যবহৃত। এই স্যানিটাইজার কি ১০০ ভাগ নিরাপত্তা দিতে পারে?
উঃ দেখুন ১০০ ভাগ নিরাপত্তা তো কিছুতেই নেই। তবে যেগুলোতে ম্যাক্সিমাম কভার করা যায় সেগুলোই করতে হবে। বেস্ট প্রটেকশন হচ্ছে দূরত্ব মানে আমি এক্সপোর্স হবো না। ফিজিক্যাল ডিসটেন্সি মেইনটেইন করতে হবে। এর পরে হাতটা বারবার সাবান দিয়ে ধুতে হবে।
এগুলো যখন আমরা করতে পারছিনা তখন আসে স্যানিটাইজার। কিন্তু এই স্যানিটাইজার যে দুফোঁটা হাতে নিয়েই ঘষে নিলাম মানেই আমাদের হাত ye স্যানিটাইজ হয়ে গেলো তা কিন্তু নয়। এটা প্রপার এডেকুইটিক পরিমানে নিয়ে প্রপার হ্যান্ড ওয়াশিং স্টেপস ফলো করে হাত স্যানিটাইজ করতে হবে। যতবার স্যানিটাইজার ব্যবহার করবে ততবার ওই স্টেপস ফলো করতে হবে। আর এতো দিনে হ্যান্ড ওয়াশিং স্টেপস আমরা বহু মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করেছি। যখনই আমি কোন পাবলিক সারফেইস টাচ করছি তখনই স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে প্রপার স্টেপ মেনে।
৮) এসমার রোগীদের ক্ষেত্রে শোনা যাচ্ছে তাদের মাস্ক পরলে, হাঁপানির সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে কী করা উচিৎ?
উঃ এটা খুব কঠিন প্রশ্ন। এটা খানিকটা শাঁখের করাতের মত, এদিকে গেলেও কাটে ওদিকে গেলেও কাটে। এক্ষেত্রে যারা প্রপার মেডিকেশনে থাকে অর্থাৎ ইনহেলারস এন্ড ওদার্স এন্ড লাইফস্টাইল মোডিফিকেশন করেন তাহলে তাদের অসুবিধা হওয়ার কথা না। অসুবিধা তাদের হয় যাদের এসমা পার্শিয়ালি কিন্তু আনকন্ট্রোল। সুতরাং প্রথমে এসমাকে কন্ট্রোল করতে হবে। তার পরেও অনেক সময় এই এসমার পরিমান বৃদ্ধি পেলে তখন মাস্ক পরাটা কষ্টকর তাই পারদপক্ষে সেই সময় বাড়ি থেকে না বেরোনোই ভালো। যদিও বেরোচ্ছে তাহলে কিন্তু মাস্কটা প্রপারলি ব্যবহার করতে হবে এবং যখন শ্বাসের কষ্ট হচ্ছে তখন কোন ফাঁকা জায়গায় একটু মাস্কটা নামিয়ে শ্বাস নিয়ে নিতে পারেন।
৯) ধরুন কাউর বাড়িতে কোন করোনা আক্রান্ত রোগী আছেন। তিনি একেবারেই হোম ইসোলেশনে আছেন। বেশিভাগ বাড়িতেই দু-তিনটি ঘর থাকলেও টয়লেট কিন্তু একটাই থাকে। সেক্ষেত্রে রোগী এবং তার পরিবারের বাকি সদস্য টয়লেট কীভাবে ব্যবহার করবেন?
উঃ আপনি তো তাও বললেন তাদের দুটো তিনটে রুম আছে। কিন্তু আমাদের দেশ গরিব দেশ, এক রুমের পরিবার সেক্ষেত্রে তারা কী করেই বা ইসোলেশন করবে! আর যতক্ষনে বুঝতে পারছি আমরা ততক্ষনে তাদের পরিবারের মধ্যে ছড়িয়ে গেছে ধরে নিতে হবে। তাহলেও তাকে সেপারেট থাকতে হবে যাতে তার যে ভাইরাল লোডটা কম লোড ট্রান্সমিশন হয়। এক্ষেত্রে আমরা আইডিয়ালটা বলি তবে তারক্ষেত্রে যতটা প্রাকটিক্যাল ততটাই তাকে মানতে হবে। তবে আইডিয়ালটা মানাটাই বেস্ট। তবে বেস্ট জিনিস মানাটা সম্ভব নয় সবক্ষেত্রে, তাই যতটা মানা পসিবেল ম্যাক্সিমাম সেটাই মানবো। তাই আমি যখন হোম ইসোলেশনে আছি তখন টয়লেট যাওয়ার সময় যদি এক্সহাস্ট থাকে তাহলে তা চালিয়ে দিতে হবে। মুখে মাস্ক পরে যেতে হবে। ধরুন স্নান করার সময় গরম জলে স্নান করা উচিৎ। তবে এতে যে আপনার সব করোনা ধুয়ে গেলো সেটা ভাবা উচিৎ নয়। রোগীর ব্যবহার হয়ে গেলে যদি ১৫-২০ মিনিট টয়লেট ব্যবহার না করে, এক্সহাস্ট চালিয়ে দেওয়া যায় এবং যে ট্যাব বা কমন কন্টাক্ট পয়েন্ট আছে সেখানে স্প্রে করে দেওয়া যায় তাহলে অনেকটা সংক্রমন এড়ানো যায়। তবে এটাও যে সবার পক্ষে করা সম্ভব সেটাও নয়। তবে আমি বলবো যে, যার পক্ষে ততটা বেশি সম্ভব ততটা তার জন্যে আইডিল।
১০) করোনা আবহাওয়া একটা বছর শেষ। নতুন বছরে করোনা আবহাওয়া কতটা বাড়ছে কমছে, কোনো আশার খবর দিতে পারছেন কী আপনাদের মত ডাক্তারবাবুরা?
উঃ দেখুন আমরা সব সময়ই কিন্তু আশাবাদী। আশাবাদী নাহলে আমরা লড়বো কী করে! আমি তো চাইবো কালকেই সব পরিষ্কার হয়ে যাক, ভোজবাজির মত। কিন্তু বাস্তব কিন্তু তা নয়। বাস্তব বলছে আমাদের করোনাকে নিয়ে বাঁচতে হবে, করোনাকে নিয়ে চলা শিখতে হবে।
১১) আপনার কী মনে হয় যে হার্ট ইমিউনিটি তৈরী হওয়া শুরু হয়ে গেছে?
উঃ নিশ্চই এখন তো সে ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। লোকের থেকে লোকে ছড়াতে ছড়াতে একটা স্টেজ পর্যন্ত হার্ট ইমিউনিটি গেছে। তবে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও এখন মনে করা হয় যে ৬০-৭০% মানুষের মধ্যে হার্ট ইমিউনিটি বেড়ে যায় তাহলে মোটামুটি সোসাইটি প্রটেক্টেড থাকবে।
এক্ষেত্রে একটা সমস্যা আছে, অনেক সময় দেখা যাচ্ছে একই ব্যক্তিকে এক বছরের দ্বিতীয় বার করোনা আক্রমণ করছে। সেক্ষেত্রে তার শরীরে যে এন্টিবডিটা ডেভেলপ করেছিল সেটা তার শরীরে বেশিদিন থাকলো না। তবে থাকলেও বা সেটা পরবর্তী করোনার ক্ষেত্রে তা নিউট্রালিজিং এন্টিবাডি হিসাবে কাজ করে। তবেই না তার মধ্যে কোভিডি হলো। এই ডিলেমাটা চলে আসছে তখন আর শুধুমাত্র হার্ট ইমিউনিটির ভিত্তি করে ছেড়ে দেওয়া যায়না এক; তবে এটাও ঠিক যখন কোনো ভাইরাস দীর্ঘ দিন যায় তার সিরিয়াল প্যাসেজ কমতে কমতে তার কিলিং পাওয়ারটা কমে যায়। একটা মিউটেশন হয়ে যায়, কিন্তু এই মিউটেশন যদি খারাপের দিকে হয় তাহলে সেটা এগ্রেসিভ হয়ে যায়, যেটা সিঙ্গাপুরে হয়েছিলো।
তবে যেটা আশার কথা বলছেন, সেটা বললে বলবো হ্যাঁ এতোটা খারাপ হবে না নতুন বছর। তা বলে আমরা বেপরোয়া ভাবে ঘুরবো সেটাও ঠিক না। এরপর ভ্যাকসিন আসছে, আশা করা যায় ভ্যাকসিন তিন থেকে ছয়মাস সুরক্ষা দেবে। হয়তো দেখা যাবে ছয়মাস পর পর করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার কথা বলা হবে। এই করতে করতে একটা কিন্তু মধ্যবর্তী সুরাহা হয়ে আসবে। এটা আশা করা যায় আমরা যদি নতুন বছরের অগাস্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যদি লড়ে যেতে পারি তাহলে সামনের দিন সুখের দিন।
১২) পারিসংখ্যান বলছে ৫-এর কম বা ৫-৭ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে করোনা আক্রামণের সংখ্যা কম। কিন্তু বাচ্চাদের তো ইমিউনিটি পাওয়ার কম। তাহলে এর পিছনে কী কোনো বিশেষ কারণ রয়েছে?
উঃ দেখুন প্রথমেই বলি যে, বাচ্চাদের করোনা হয়না এই ধারণা দূর হওয়া দরকার। বাচ্চাদের কিন্তু করোনা হয় এবং যথেষ্ট ভালো রকমেই হয়। কিন্তু তাদের শরীরে করোনা থাবা বসাতে পারে না। সামান্য জ্বর সর্দি কাশি হয়ে বেরিয়ে যায়। তবে আপনার প্রশ্নের কোনো সরাসরি জবাব দিতে পারবে না কোনো বিজ্ঞানী। তার কতগুলো হ্যাপোথিসিস আছে। প্রথম হলো, এই ভাইরাসটা যখন ঢোকে তখন এস ই ২ রিসিপিটোর লাগে। যেটা শ্বাসনালী বা খাদ্যনালীতে থাকে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও সেটা খাদ্যনালীতে থাকে। ফলে দেখা যাচ্ছে এই এস ই ২ রিসিপিটোরটা বাচ্চাদের শ্বাসনালীতে কম। আবার দেখা যাচ্ছে যেহেতু এই রিসিপিটোরটা খাদ্যনালীতেও থাকে তাই সেটা লুস মোশনকে রিপ্রেসেন্ট করে। আবার NIH এর একটা রিপোর্ট আছে তাতে দেখা যায় যে গর্ভস্থ ফুল আছে তাতে এই রিসিপিটোরটা কম থাকে। আর যেটুকু আছে তার সাথে ভাইরাসটা লেগে কোষের মধ্যে প্রবেশ করে যা কিছু করবে তার জন্যে দুরকম এনজাইমস দরকার হয়। এই রকম এনজাইমস গর্ভস্থ ফুলে নেই। সেই কারণেই মায়ের থেকে কোনো ভাবেই গর্ভস্থ বাচ্চা করোনা আক্রান্ত হচ্ছে না। আচ্ছা এটা কিছুর পরেও বাচ্চারা কী সেভ! না একদমই না। গতবছরের অগাস্ট-সেপ্টেম্বর থেকে দেখছি প্রচুর বাচ্চা post covid sequelae নিয়ে আসছে। এই পরিস্থিতিকে বলা হচ্ছে PIMS ( Paediatric Inflammatory Multisystem Syndrome) এটা কাওয়াসাকি ডিজিসের মত একটা। বাচ্চার ইমিউনিটি বাচ্চার বডির সাথে লড়ছে। হঠাৎ করে জ্বর সাথে, প্রচন্ড ইরিটেবল গলার গ্যান্ডগুলো ফুলে যাচ্ছে। কখন লুস মোশন কখন প্রচুর কাশি সর্দি। CRP বলে একটি ইনফেকশনের মাত্রা অতন্ত বেশি আসছে। তবে তার কিছু ডেফিনিট কোনো ফোকাস পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু আমরা যখন টেস্ট করছি তখন তার RTPCR পসিটিভ আসছে কিংবা COVID পসিটিভ আসছে।
এবং এটা একটা sequelae হয়ে আসছে।
----------------------------------------------------------------------
উপরিক্ত দীর্ঘ এবং সুন্দর আলোচনা থেকে আমরা এটা বুঝতে পারলাম যে, করোনার সাথে আমরা যদি আরও কয়েকটা মাস লড়াই চালিয়ে যেতে পারি তাহলে আমরা খুব শীগ্রই সুখের মুখ দেখবো। এবং এই উৎসবের মরশুমে ঘরে বসে থাকতে কারই বা ইচ্ছে করে বলুন, তবে আমাদের সঠিক সতর্কতা এবং পারামর্শ মেনে সুরক্ষিত ভাবে, এই সুস্থ জীবনকে সুন্দর করে উপভোগ করতে হবে।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। এই বিষয়ে আরও বিশদে জানতে আমরাদের Bengal Fusion চ্যানেলটিকে সাবস্ক্রাইব করুন এবং নীচে দেওয়া ভিডিওর লিঙ্কটিতে ক্লিক করুন।